
রাখাইনে চলছে গণহত্যা। শিশু কাঁদছে আর মৃত মায়ের দুধ পান করছে। পানিতে ভাসছে মানুষের লাশ। জ্বলছে ঘরবাড়ি। বিপন্ন মানবতা। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে শতাধিক রোহিঙ্গা। কিন্তু এতকিছুর পরও নীড়ব-নির্বিকার শান্তির দূত অংসান সূ চি, যাকে বিশ্বশান্তির নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।
সূ চির এমন নীড়বতায় হতবাক বিশ্বমানবতা, হতবাক বিশ্বমানব জাতি, হতবাক আমরা বাংলাদেশের জনগণ। অংসান সূ চি শান্তির দূত নয়, সাম্প্রদায়িকতার দূত। মিয়ানমারে মানবতার এমন নিষ্ঠুর বিপর্যায়ে সূ চি নির্বিকার থাকলেও আমরা সাধারণ মানুষ নীড়ব থাকতে পারি না বলে প্রতিবাদ বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশ মানব জাতীয়তাবাদী দলের (বিএইচএনপি) আহ্বায়ক ড. সুফি সাগর সামস্। প্রতিবাদ বার্তায় ড. সামস্ বলেন, মিয়ানমার বলছে, রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়িতে আগুন দিয়েছে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। এসব সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধের চেষ্টা তারা করছে। প্রশাসন এসব রীতিশুদ্ধ কথা বললেও কথিত ‘গণতন্ত্রের মানস কন্যা’ সূ চি রোহিঙ্গা ইস্যুতে সম্পূর্ণ নীড়ব। মিয়ানমারের এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশের জনগণ ও বাংলাদেশ মানব জাতীয়তাবাদী দল (বিএইচএনপি) বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন।
জাতিসংঘ রোহিঙ্গা শরনার্থীদের প্রবেশের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ইতিমধ্যে সীমান্ত পেরিয়ে অনেক রোহিঙ্গা উপকূলীয় অঞ্চলে অনুপ্রবেশ করেছে। সুফি সামস্ বলেন, বাংলাদেশ চরমপন্থী ‘জঙ্গি’ ইস্যুতে একটি বিশেষ স্পর্শকাতর অবস্থানে রয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে প্রচন্ড শক্তিশালী ও প্রভাবশালী জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের যুদ্ধাপরাধের বিচারে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। তারা বর্তমান সরকারের ওপর বিশেষভাবে ক্ষুব্ধ।
কোনরকম সুযোগ পেলে তারা নিষ্ঠুর প্রতিশোধ নিবে। প্রতিশোধ নিতে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ব্যবহার করবে না তার কোনরূপ গ্যারান্টি নেই। তাছাড়া বর্তমান সরকার হলো একটি ‘রীতিশুদ্ধ নির্বাচনী’ সরকার। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নিজেও সন্তুষ্ট নয়। সুতরাং এমন একটি সরকারের পক্ষে রোহিঙ্গাদের প্রবেশের জন্য সীমান্ত খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত কোনক্রমেই সঠিক হবে না।
মানবতাবাদী এ নেতা আরো বলেন, মিয়ানমারের ‘আরাকান’ বর্তমানে যাকে ‘রাখাইন’ প্রদেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বৌদ্ধ ও মুসলিম রোহিঙ্গাদের এটি শান্তির আবাস ভূমি ছিল। এ শান্তির নীড়ে কেন আগুন দেয়া হলো? শত শত বছর ধরে রোহিঙ্গারা এখানে বসবাস করে আসছেন। তাদের পূর্বপুরুষরা আরব, পার্সি ও মুর্সি বণিক ছিলেন। তারা দশম থেকে ষোড়শ শতকের মধ্যে আরাকানে এসেছিলেন। তারা স্থানীয় নারীদের বিয়ে করে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছেন। ড. সামস্ বলেন, ১৯৬২ সালে জেনারেল ‘নে উইন’ মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলের পর থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর রাষ্ট্রীয় নির্যাতন অব্যাহতভাবে চলছে।
১৯৮২ সালে নাগরিকত্ব আইনে রোহিঙ্গাদের দেশের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এটা জাতিসংঘ ঘোষিত সর্বজনীন আইনের পরিপূর্ণ লঙ্ঘন। একটি শিশু যে সম্প্রদায়ে জন্মগ্রহণ করুক না কেন, নাগরিকত্ব তার জন্মগত অধিকার। এ অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারে না। সুতরাং রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা, শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস ও তাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে মিয়ানমারকে। জাতিসংঘকে রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে হবে।
মানব জাতীয়তাবাদী এ নেতা আরো বলেন, ‘জলবায়ূর ভয়ঙ্কর পরিবর্তনে অগামী কয়েক দশকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশের লাখ লাখ লোক গৃহহারা হয়ে যাবে। বিপর্যয়কর এই করুণ পরিণতি বাড়তেই থাকবে। এটা শুধু বাংলাদেশেই নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় ঘটবে। সমুদ্রের গভীর অতলে তলিয়ে যাবে মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কা।
ভারতের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হবে। যেসব রাষ্ট্র এজন্য দায়ী, সেসব রাষ্ট্রে জলবায়ূ শরনার্থীদের প্রবেশের অধিকার আদায়ে মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সুতরাং রোহিঙ্গাদের হত্যা ও দমন-পীড়ন বন্ধ করে নিরাপত্তার বিধান, তাদের ভিটামাটিতে বসবাসের অধিকার এবং নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ মানব জাতীয়তাবাদী দল (বিএইচএনপি) মিয়ানমার সরকারের প্রতি বিশেষভাবে আহ্বান জানাচ্ছে।’
মেহেদী হাসান, দপ্তর সম্পাদক, বিএইচএনপি
খবরটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে পেজে লাইক দিয়ে সাথে থাকুন