
সেদিন ব্যাংক থেকে একটা জরুরী প্রয়োজনে বেশ কতগুলো টাকার ট্রান্সেকশন করতে হল ।পাঁচশ টাকার মোটা বান্ডেলগুলো টাকা গোনার মেশিনে বারবার কতগুলো নোট তা ইন্ডিকেট করছিল ।প্রয়োজনটা বেশ জরুরী ছিল বলে দ্রুত অগ্রনী ব্যাংক,মিরপুর-১ শাখা থেকে বের হলাম ।গেলাম ব্রাক ব্যাংক,মিরপুর শাখায় ।ওই তোলা টাকাগুলোই জমা দিতে ।ক্যাশিয়ার মেয়েটা সবগুলো টাকা বেছে একটি পাঁচশ টাকা ড্যাম বলে পাল্টে দিতে বলল ।আমি জানালাম টাকাটা কেবলই অন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক থেকে তোলা ।
সে বান্ডিলসহ পাল্টে আনার পরামর্শ দিল ।সাথে আমার পাঁচ বছরের মেয়েটা ।ওকে সাথে নিয়ে রাস্তা দিয়ে একগুলো টাকা বহন করা এই ঈদ মৌসুমে ফাঁকা রাস্তায় নিরাপদ মনে করলাম না ।বরং নিজের পকেট থেকে অন্য একটি টাকার সাাথে পাল্টে দিলাম ।কতবড় ভূল আমি নিজের অজান্তে করলাম আর সামনে আমার আরও কতবড় বিপদ অপেক্ষা করছে তা জানতেই পারলাম না ।
কাজ শেষে কম্পিউটারের দোকানে কতগুলো কাজ করালাম ।দোকানীকে ব্যাংক থেকে ফেরত দেয়া সেই পাঁচশ টাকাটি দিলে সেও জানালো আপা টাকাটা বেশ নরম হয়ে গেছে পাল্টে দেন ।কাছে থাকা টাকা থেকে তার পাওনা মিটিয়ে দিলাম ।চললাম মিরপুর ১০ এ অন্য একটি ব্যাংকে কিছু টাকা ডিপিএসে জমা দিতে ।সেখানেও ওই টাকাটা দিলে ওরা বলল এক নরম টাকা !পাল্টে দেন ।আবার পাল্টে দিলাম ।এবার বের হলাম একটি ইন্সুরেন্স কোম্পানীর প্রিমিয়াম জমা দিতে ।ওরাও টাকাটা নিল না ।ততক্ষনে বেলা দুপুর ।মেয়ে ভীষন ক্লান্ত আর ক্ষুধার্ত ।প্রিমিয়ামটা জমা দেয়া হল না ।মেয়ের জন্য প্যাকেট বিরিয়ানী কিনব বলে দোকানে রিক্সা থামালাম ।ওরা টাকাটা নিল না ।বিরিয়ানীও কেনা হল না ।বাড়ি ফিরে যা ছিল খাইয়ে দিলে মেয়ে ঘুম পড়ল ।
এর মধ্যে দু একজন উপদেশ দিল আয়রন মেশিন টাকাটা আয়রন করলে বেশ শক্ত হলে টাকাটা চালানো যাবে ।ভাবছি তাই করব ।কিন্ত বাসায় কাজ করে যে সহকারী মেয়েটা ও জানালো,আপাা আমারে দ্যান ,আমি চালাইয়া দিমুনে ।
বেচারী পরদিন ফিরে এসে জানালো পানিতে দিয়ে নাকি টাকাটা গলে গেছে ।জাল টাকা ধরতে এভাবে পানিতে দিলে গলে যায় ।
মানে পাঁচশ টাকা পানিতে ভেসে শূণ্যে মিলিয়ে গেল !!!!!!
জীবনের কষ্টগুলো হজম করে ফেলাটা একটা আর্ট ।এটা সবাই পারে না ।একজন লেখক তার কষ্টগুলো নিয়ে চোখের কোনের পানি শুকিয়ে যাবার আগেই এক একটি কথামালা সাজিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টি করতে পারে ।কিন্ত যে মানুষ খুব সাধারণ ?যে কিনা তিনবেলা পেটপুরে খাওয়াটাই জীবনের সবচেয়ে বড় আর্ট বলে মনে করে? তার কাছে কষ্টগুলো কষ্ট মনে হয় না কেননা ঠকে গেলে সবার আগে তার পেটে লাথি পড়ে ।
আমাাদের ভেতরেই কেউই হয়ত অন্যের পেটে লাথি মারি ।গাড়ি বাড়ি নারী নিয়ে মুখোশ পরে ঘুরে বেড়াই ।এই মুখোশই হয় তাদের সান্তনা ।
আর একটি পাঁচশ টাকার জাল নোট পানিতে গলে শূণ্যে ভেসে যাওয়ার গল্পে লেখকের পাঠকের মনে ইশস, আহারে ভাবের উদয়ই যে লেখকের জন্য বড় সান্তনা !!
রুমানা রশীদ রুমী
লেখিকা।
খবরটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে পেজে লাইক দিয়ে সাথে থাকুন